মানব জীবনের ঘড়ি তত্ব

একটা গোল ঘড়ি।১২টা থেকে শুরু হয়ে ঠিক বিপরীত দিকের ৬য়ের ঘর পেরিয়ে আবার ১২তে যেয়ে শেষ হয়। আপনি হাজারো চেষ্টা করলেই কিন্তু সময়ের এই নিয়ম মেনে চলাটাকে থামাতে পারবেন না,তাই আমরা এটার সাথেই অভ্যস্ত হয়ে গেছি,এটিকেই মেনে নিয়েছি। তাহলে কেন আমরা জীবনের ক্ষেত্রে সেটাকে মানতে পারি না???

আমাদের সবকিছুই ঐ ঘড়ির মত নিয়ম মেনে চলে। ১২তেই আমাদের জীবন শুরু,আস্তে আস্তে সেটি বিপরীত দিকের ৬ ঘর পেরিয়ে এসে আবার ১২তেই শেষ হয়। এর মধ্যেই আমরা জীবন সীমাবদ্ধ। আমার চট্টগ্রামে একটা প্রবাদ আছে “গুরা বুড়া এক সমান””। মানে হচ্ছে বাচ্চা এবং বৃদ্ধ মানুষ এক সমান। এটাকে ধরতে পারেন এই ঘড়ি তত্বের একটা চমৎকার উদাহরণ। ১২তেই আমাদের জীবন শুরু হয়, এই সময়ে আমাদের একটু এক্সট্রা কেয়ারের প্রয়োজন হয়,ঠিক তেমনি একজন মানুষ জীবন চক্র শেষ করে আবার যখন ১২এর আশে পাশে পৌঁছায় তখনও তার এক্সট্রা কেয়ারের প্রয়োজন হয়। আপনি হাজারটা চেষ্টা করেন,কিন্তু এই নিয়মকে ব্রেক করতে পারবেন না,এটা সম্ভব না। আপনাকে এটা মেনে নিয়েই চলতে হবে…

এই পৃথিবীর বাকি জিনিসগুলোর ব্যাপারেও ব্যাপারটা একই। ঘড়ির ১২তে মানুষের সৃর্ষ্টি হল আবার ১২তেই শেষ হবে। শুরুর ১২র সময়ে মানুষ নগ্ন থাকতো, অশালিন ছিল,তারপর ঘড়ির কাটা এগুতো থাকলো আর মানুষও কাপড় চোপড় পড়া শিখলো,সভ্য হতে থাকলো। তারপর নিয়মমত ঘড়ির কাটা ৬ ঘরের এল এবং মানুষও পুরোপুরি শালিন এবং সভ্য হল। তারপর আবার ঘড়ির কাটা যতই আস্তে আস্তে ১২র ঘরের দিকে যেতে শুরু করলো ততই আমাদের মধ্যে আবার সেই আদিম যুগের অভ্যাসগুলো ফিরে আসতে লাগলো। আমরা আবার নগ্ন হতে, অসভ্য হতে শুরু করলাম। ব্যাপারটা দেখতে খারাপ লাগলেও আসলে মেনে নেওয়া ছাড়া আর কিছু করার নেই, আমরা একটা নিয়মের মধ্যে আবদ্ধ,এটাকে ভঙ্গ করার ক্ষমতা আমাদের নেই।

আমাদের বর্তমান যে অস্থির পরিস্তিতি, মানুষের মধ্যে যে এত্ত হিংসা,হিংস্রতা,বর্বরতা এসবের জন্য আসলে আমাদের তেমন কোন দোষ নেই,আমরা সিষ্টেমের সঙ্গী মাত্র।এসব ভাল হয়ে যাবে,ঠিক হয়ে যাবে এসব যতই আশা করা হোক না কেন আসলে বাস্তবতা হচ্ছে কিছুই ঠিক হবে না,বরং দিন দিন অবস্থা আরো খারাপ হবে,কারণ আমরা আবার ১২র ঘরের কাছাকাছিই পৌঁছে যাচ্ছি। তাই এসব মেনে নিয়েই আমাদের চলতে হবে,এছাড়া আর কোন উপায় নেই।

মনেহতে পারে আমরা উন্নতির দিকে যাচ্ছি, কিন্তু আসল সত্যটা হচ্ছে আমরা উন্নতি নয় পৃথিবীর ধংসের দিকেই এগুচ্ছি একটু একটু করে..

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *